২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ঘটমান সংবাদ এ স্বাগতম।  সাথেই থাকুন।
হোমরাজনীতিআওয়ামী লীগহারিকেন আন্দোলনের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

হারিকেন আন্দোলনের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাদের হারিকেন নিয়ে আন্দোলনের  কঠোর সমালোচনা করেছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী জ্বালানির আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষায় সরকারের সাশ্রয়ী নীতির বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের কাজ করছে তাদের বিদ্রুপাচ্ছলে প্রচলিত প্রবাদ ‘হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেয়ার প্রতিও ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা তাঁর সরকার করবে।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে শোকবহ আগস্টের প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে রাজধানীর ধানমন্ডী ৩২ এর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখেছি আমাদের বিএনপি নেতারা হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তো তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে, তাদের সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন।

আর দেশের মানুষকে আমরা নিরাপত্তা দেব এবং দেশের মানুষ যাতে ভাল থাকে সেই ব্যবস্থা নেব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কথা ছিল প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার আমরা দিয়েছি। আজকে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সাশ্রয়ে বিশে^র প্রত্যেকটা দেশই- আমেরিকা হোক, ইংল্যান্ড হোক বা আমাদের প্রতিবেশী ভারত হোক সকলেই দিকে নজর দিয়েছে। এ বিষয়টা সবার মাথায় রাখতে হবে। যখন উন্নত দেশগুলো হিমসিম খায় তখন আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি যেন ভবিষ্যতে কোন বিপদে না পড়ি, সাশ্রয়ী হয়েছি।

তিনি বলেন, আর সাশ্রয়ী হবার অর্থ এই নয় যে এখান থেকে লুটপাট করে খেয়েছি। লুটপাটতো বিএনপিই করে গেছে। আমরা সেই লুটপাট বন্ধ করে উন্নতি করেছি নইলে কিভাবে মাত্র ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে আজকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা আজকে অর্জন করেছি।

তিনি করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউত্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ^ মন্দার খন্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশে^ই এমনকি অকে উন্নত দেশের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী এবং দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগেরও প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে এই আহ্বান জানাবো  দেশবাসীর কাছে যেতে হবে এবং আমাদের খাদ্য যে আমরা নিজেরা উৎপাদন করবো সে কথাটা জানাতে হবে।’

বিএনপির শাসনামলে মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকারটাই ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য হলো একটা মিলিটারি ডিক্টেটর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠন করেছিল তাদের কাছে এখন নানা রকম নীতির কথা শুনতে হয়। যারা এই বাংলাদেশটাকে বানিয়েছিল অস্ত্র চোরাকারবারি, সন্ত্রাসি জঙ্গীবাদের দেশ।

তিনি বলেন, বিএনপির দেশকে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল করে দেশের মানুষের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। পাঁচ বার দুর্নীতিতে এই বাংলাদেশ এক নম্বরে ছিল। হত্যা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এই তো ছিল। প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া এবং তাদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা। শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস করে স্বাক্ষরতার হার কমিয়ে ফেলা।

তিনি বলেন, দেশকে খাদ্য ঘাটতিতে রেখে ভিক্ষুক জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচয় করানো এবং ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আসা। এটাও একটা ব্যবসা। খাদ্য কিনবে, ব্যবসা করবে এবং কমিশন খাবে এটাই ছিল বিএনপির নীতি। ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছে। একটা চালান ধরা পড়েছে। এই রকম কতো চালান এই দেশে এসেছে আর গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ এর ১লা অক্টোবরের নির্বাচনে কি কোন মানুষ ভোট দিতে যেতে পেরেছে? সমস্ত বাংলাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এরা তো প্রকাশ্যে সিল মারতো। একেকটা বাসে করে যাবে বিএনপির সন্ত্রাসীরা একেকটা বুথে ঢুকবে, সিল মারবে, বাক্স ভরবে আর চলে আসবে। আর সেটা না পারলে সোজা ফলাফল ঘোষণা।

এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় সেই সময় মাগুরা নির্বাচন, মিরপুর নির্বাচন ও ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচন হয়েছে বলেও তিনি উদাহারণ টেনে বলেন, তাদের কাছ থেকেও কথা শুনতে হয় নির্বাচন নিয়ে, তারা কথা বলে কোন মুখে? কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে তো তাদের ক্ষমতায় আসা নয় বরং অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে অথবা দেশ বিক্রির মুচলেখা দিয়ে আসা।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ’৭৫ এর বিয়োগান্তক বেদনাবিধূর অধ্যায় স্মরণ করে এর প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে সে সময়কার ব্যাপক বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের বিভিন্ন প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

জাতির পিতা হত্যাকান্ড ইতিহাসের একটি কলংকজনক অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আপনজন হিসেবে বাবাকে যেজন্য তাঁরা কাছে পাননি সেই বাঙ্গালিদের হাতেই কেন জাতির পিতাকে জীবন দিতে হলো সে প্রশ্নের উত্তর আজো খুঁজে ফেরেন তিনি।

জাতির পিতা হত্যার ৬ বছর পর্যন্ত প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে একরকম জোর করেই দেশে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ফেরার পরও তিনি দেখেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভিঙ্গ-মঙ্গা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমনকি যে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে বিশে^ জাতির পিতার সরকারের দুর্নাম রটনার অপচেষ্টা হয় সে বাসন্তীকে খুঁজে বের করে দেখতে পান তারও ভাগ্য ফেরেনি। তবে, আওয়ামী লীগ সে সময়ও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে অপবাদ দিয়ে ১৫ আগস্ট ঘটানো হলো তাহলে দেশের কি পরিবর্তন তারা আনলো সেটা দেখার ইচ্ছ ছিল বলেই আমি কুড়িগ্রামের চিলমারি গিয়ে ৩ মাইল হেঁটে কাদা-পানি মাড়িয়ে, মেঠে পথ ভেঙ্গে সেই বাসস্তীর বাড়ি গিয়ে দেখেছি ছিন্ন কাপড়ে বাসন্তিকে, তার মা অসুস্থ, একটি বেড়ার চালার নিচে কোনমতে পড়ে আছে। তাকে ঘরও বলা যায় না। মাছি ভনভন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশে খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদেও যে রাজত্ব গড়ে উঠেছিল সেভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

আরও পড়ুন: কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি

Print Friendly, PDF & Email

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বশেষ খবর

Recent Comments