১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ঘটমান সংবাদ এ স্বাগতম।  সাথেই থাকুন।
হোমরাজনীতিআওয়ামী লীগআওয়ামী লীগ মানেই স্বাধীনতা, দেশের সকল অর্জন : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ মানেই স্বাধীনতা, দেশের সকল অর্জন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানেই দেশের স্বাধীনতা, মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন। কেননা দেশের সকল অর্জনের সঙ্গেই দলটি জড়িত। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আওয়ামী লীগ অর্থ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন, আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ, আওয়ামী লীগ অর্থই উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম ও ২০২২ সালের বাজেট অধিবেশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।

শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, সেবা করার সুযোগ পেলে তিনি অবশ্যই আগামীতে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং ইনশাল্লাহ, এই আওয়ামী লীগ যদি জনগণকে সেবা করার সুযোগ পায় অবশ্যই বাংলাদেশ আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।’

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর, একরকম জোর করে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা-মা সব হারিয়ে ফিরে এসেছিলাম এবং একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ আমাকে তাদের সভাপতি নির্বাচন করেছিল, পাশাপাশি এদেশের জনগণ, তাদের আশ্রয়েই আমি এসেছিলাম। তাদের মাঝেই আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার হারানো বাবা, মা এবং ভাইদের স্নেহ। তাই এদেশের মানুষের জন্য যে কোন আত্মত্যাগেই আমি সবসময় প্রস্তুত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। আর সবথেকে বড় কথা হলো, গণমানুষের সমর্থন নিয়েই আমরা সেটা করেছি। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবেনা। কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি এবং আওয়ামী লীগের অগনিত নেতা-কর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তি সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে এর নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। আর ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দ দুইটি বাদ পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। প্রতিষ্ঠার সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিলেন। তাঁকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদও পয়েন্ট অব অর্ডারে এদিন বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণেরই সংগঠন এবং সবসময়ই এদেশের শোষিত-বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের জন্যই সংগ্রাম করে গেছে। আর এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে, কত মানুষ জীবন দিয়েছে তাদের সেই আত্মত্যাগকে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। মৃত্যুবরণকারিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৩ বছরের সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি এবং এই বাংলাদেশ নামটিও জাতির পিতারই দেয়া। আর এই আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তোলার জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘পূর্ববাংলা আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। সেইসঙ্গে দল মত  নির্বিশেষে সকলের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নামের সঙ্গেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জনমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম জড়িত। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার থেকে শুরু করে স্বাধীনতা  যুদ্ধ এবং যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলায় দলটি সবসময় অগ্রণী থেকেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং সেই সময়ের মধ্যে তিনি একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করেন এবং আমাদের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করে যান। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৭৫ সালে দেশটি জাতিসংঘ কতৃক স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করে। দুর্ভাগ্য আমাদের ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জীবনে অমানিষার আঁধার নেমে নেমে আসে। তিনি বলেন, সেদিন আমরা শুধু জাতির পিতাকেই হারাইনি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সব সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত হয় এবং যে শ্লোগান দিয়ে এদেশের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছিল সেই ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানও নির্বাসিত হয়। সেইসঙ্গে ইতিহাস থেকেও জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর পর, আওয়ামী লীগ এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।

আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সেই পরিকল্পনাও তাঁর সরকার তৈরী করে দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে, সরকার প্রধান বলেন, ২১০০ সালের জন্য শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ যাতে উন্নত সমৃদ্ধ হয় সে পরিকল্পনাও তৈরী করে দিয়েছি। এই ধারবাহিকতা নিয়ে এদেশ চলতে থাকলে, এদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবেনা, রুখতে পারবে না, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

আওয়ামী লীগের অগনিত নেতা-কর্মী সবসময় ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা, ক্ষরা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় দেশের মানুষের পাশে আছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, সরকারে থাকি আর বিরোধি দলে থাকি, যখনই বাংলার মানুষ কোন সমস্যায় পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছে। এবারের চলমান সিলেট সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি যদি দেখেন তাহলেও দেখবেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই সেখানে আগে গেছে এবং তাদেরকে সাহায্য করেছে। আর এভাবে মানুষের সেবা করাটাই আমাদের কর্তব্য এবং দায়িত্ব, মানুষের সেবা করাটাই আমাদের আদর্শ এবং এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর সম্পূর্ণ বিসর্জন দেয়া হয়েছিল। সে সময় বার বার শুধু ক্যু হোত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনর মাধ্যমে আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি। আর যা করতে গিয়ে আমরা বহু নেতা-কর্মীকে হারিয়েছি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এই স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। আর তাঁদের সেই আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আজ আমরা জনগণকে সেবা করার অধিকার যেমন পেয়েছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এবং আজ ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে ময়মনসিংহে থাকছে জমকালো আয়োজন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বশেষ খবর

Recent Comments

Mastodon Mastodon