১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ঘটমান সংবাদ এ স্বাগতম।  সাথেই থাকুন।
হোমঅন্যান্যইসলাম ও জীবনহাদিস ও কোরানের আলোকে আত্মহত্যা-র শাস্তি ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায়

হাদিস ও কোরানের আলোকে আত্মহত্যা-র শাস্তি ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায়

হাদিস ও কোরানের আলোকে আত্মহত্যা একটি জঘন্যতম পাপ। মানুষকে একমাত্র আল্লাহই জন্ম দেন এবং একমাত্র তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ, যা কবিরা গুনাহ হিসেবে চিহ্নিত। আল্লাহ মহান এমন কাজকে মোটেই পছন্দ করেন না। এ কারণে যদিও শরিয়তে নির্দেশনায় আত্মহত্যাকারীর জানাযা হয় তবু রাসূল [সা.] নিজে কখনো আত্মহত্যার জানাযা পড়াননি। সাহাবিদের দ্বারা তা পড়ানো হয়। আত্মহত্যা ইসলামি শরিয়তে জঘন্যতম একটি পাপ, যার একমাত্র শাস্তি জাহান্নাম। নবিজি [সা.] আত্মহত্যাকারীর জানাজা আদায় না করা থেকেই অনুমান করা যায় যে আত্মহত্যা কত বড় পাপ। আত্মহত্যা ইহকাল, পরকাল উভয়টি ধ্বংস করে দেয়।যে কোনো কারণেই হোক না কেন, আত্মহত্যা মহাপাপ। জঘন্যতম পাপ। আত্মহত্যা প্রসঙ্গে রাসুল [সা.] কঠোর হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করে গেছেন।

হাদিস ও কোরানের আলোকে আত্মহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামী বলা হয়েছে।

 আল-কোরানে আত্মহত্যা প্রসঙ্গ :   এক. আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আত্মহত্যা কর না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। [সুরা নিসা : ২৯]

 দুই. আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন- ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না।’ (সূরা বাকারা; ১৯৫ আয়াত)।

 তিন. আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে জগতে বিপর্যয় সৃষ্টি বা হত্যার শাস্তি ব্যতিরেকে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে জীবন্ত রাখে সে যেন সব মানুষকেই জীবন্ত রাখে। (সূরা মায়িদা : ৩২ আয়াত)।

হাদিসের আলোকে আত্মহত্যা : আত্মহত্যাকারী জাহান্নামী। এ প্রসংগে হাদিসের বাণী হলো –

  ** আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত নবিজি [সা.] বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।' [বোখারি ও মুসলিম]

মানুষ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার এ নিন্দিত পথ বেছে নেয়।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

১. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলহ এবং যৌতুক নিয়ে ঝগড়া-বিবাদকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যা।

২. অভিভাবক তথা পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে অভিমানজনিত আত্মহত্যা।

৩. পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার প্রতিকিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যা।

৪. আরোগ্য থেকে হতাশ হয়ে জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্থ যন্ত্রণাকাতর ব্যক্তির আত্মহত্যা।

৫. প্রেমে বা ভালোবাসায় ব্যর্থ বা প্রতারিত ও মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়া নারী বা পুরুষের আত্মহত্যা।

৬. ব্যবসা-বাণিজ্যে বা শেয়ার বাজারে বারবার ব্যর্থ হওয়া মানুষ বা তরুণ-যুবার আত্মহত্যা।

৭. প্রতাপশালী শক্রর হাতে ধরা পড়া থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা ইত্যাদি।

আত্মহত্যা রোধে করণীয়:

যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যাবতীয় ভালো-মন্দ সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এবং আল্লাহ যা-ই করেন বান্দার তাতে কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত থাকেসে কখনো নিজের জীবন প্রদীপ নিজেই নিভাবার মত হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে তো হাজার বিপদেও অবিচল থাকবে এ বিশ্বাসে যে আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অবশ্যই তিনি আমাকে পুরস্কৃত করবেন। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রথম দরকার ইসলামী শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন ইসলামের বাস্তবানুশীলন। 

১. পৃথিবীর সংঘাতময় জীবনে মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হবে- এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ কুরআনে বলেছেনস্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিচ্ছদ স্বরূপ। দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ।। তাই উভয়কে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে হবে। নিজেদের মধ্যে সংলাপ-সহযোগিতা-সমঝোতা-সহমর্মিতা থাকতে হবে।

২. পিতা-মাতার প্রথম কাজ হবে সন্তানকে ডাক্তারইঞ্জিনিয়ারউকিল বা যা-ই বানান না কেন সর্বপ্রথম তাকে কুরআন ও প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান শিখিয়ে তবেই অন্য কোনো কিছু শেখানো। দ্বিতীয়ত তাদেরকে ইসলামী কায়দায় লালন-পালন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেনকখন সন্তানকে শাসন করা যাবে আর কীভাবে সন্তানকে শাসন করতে হবে না। না জেনে প্রকৃত তথ্য না বের করে সাবালক সন্তানদের অযথা বকাঝকাও পরিহার করতে হবে। এমন মানসিক কষ্ট না তাদের কখনো দেয়া যাবে না যা তাদেরকে আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ দিতে বাধ্য করে। 

৩. মারাত্মক ও কষ্টদায়ক অসুখে পড়লে এ কথা মনে করা যেদুনিয়া হলো মুমিনের পরীক্ষার স্থান। রোগ-বিসুখ দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। আর আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরই বেশি পরীক্ষায় ফেলেন।

৪. ব্যবসায়ী ভাইদের প্রথমে মনে রাখতে হবে ব্যবসায় বলতে লাভ-ক্ষতির খেলা। ব্যবসা হালাল হলে তাতে অল্প লাভেই বরকত হয়। তাই ব্যবসায় সাময়িক কোনো লোকসানে একেবারে মুষড়ে না পড়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসায়ী ভাইদের উদ্দেশে যেসব বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন তা জেনে তদনুযায়ী আমল করতে হবে।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এই দু‘আটি পড়তেন,

«اللَّهُمَّ ، إِنِّي أَسْأَلُكَ رِزْقًا طَيِّبًا ، وَعِلْمًا نَافِعًا ، وَعَمَلا مُتَقَبَّلا»

হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হালাল রিযকউপকারী ইলম এবং মাকবুল আমল প্রার্থনা করছি।’ [মুসান্নাফআবদুর রাযযাক : ৩১৯১তাবরানী : ১৯১৬৮]

৫. আত্মহত্যার কথা মনে আসলে এ বিপদ থেকে রক্ষাকল্পে নফল নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং সিজদায় গিয়ে বিনীতভাবে আল্লাহর আগ্রহ-দয়া-সাহায্য কামনা করা প্রয়োজন। প্রতি মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। । পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায পড়ার সাথে নফল নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও সাহায্য কামনা করতে হবে। এতে ইনশাআল্লাহ মন ও হৃদয় প্রশান্ত থাকবে এবং বিপদ দুরীভূত হবে।

৬. এছাড়াও বহু ছাত্র-ছাত্রীর জীবন বিসর্জন দিতে হচ্ছে-কৃত্রিম ভালোবাসারমিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়েঅপ্রত্যাশিত আশা-আকাঙ্ক্ষার ফলে। আর এসবের পেছনে সবচে বড় হাত রয়েছে বেপর্দা ও অশ্লীলতার। ইসলামি বিধান অনুসারে প্রত্যেক মেয়েকে পর্দা সহকারে চলতে হবে।

আরও পড়ুন: ইসলাম পাঁচ স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বশেষ খবর

Recent Comments