প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়া রোধে তিনটি স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকের পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “যেখানেই আমরা থাকি না কেন, টিকা দেয়া হোক বা না হোক, তিনটি প্রটোকল আমাদের অনুসরণ করা উচিত– অবশ্যই ফেসমাস্ক পরতে হবে, সর্বাধিক সতর্কতা বজায় রাখা উচিত এবং জনসমাগমের স্থান যেমন বিনোদনমূলক স্থান বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতির সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, যারা এই জনসমাগম স্থলে যাবে তাদের স্বাস্থ্য প্রটোকল মেনে চলতে হবে। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা মনে করিনা যে আমরা নিরাপদ জোনে আছি। হ্যা, আমরা যথেষ্ট ভালো অবস্থায় রয়েছি, তবে এটি আমাদের নিশ্চিত করে না যে আমরা নিরাপদ জোনে আছি।”
গত কয়েকদিন বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা যাবে না, কারণ গত গ্রীষ্মেই সর্বোচ্চ কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়েছে। “সুতরাং, এটি নিশ্চিত নয় যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আবার চূড়ায় পৌঁছবে না।” এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনা সংক্রমণ শীর্ষ অবস্থায় পৌঁছেছিল গ্রীষ্মে যদিও আমরা সকলেই আশঙ্কা করেছিলাম শীতকালে সংক্রমণ চূড়ায় উঠবে।” আগামী এপ্রিল, মে এবং জুন আমাদের চড়া গ্রীষ্ম এবং সে কারণেই আমাদের বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, এই মাসগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি সকলকে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কেউ ভ্যাকসিনের একটি সিঙ্গেল ডোজে পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়, এ জন্য সকলকে ফেসমাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছি, এমনকি ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও।
ফেসমাস্ক পরার জন্য উৎসাহিত করার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এ জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার চালাচ্ছেন।
টিকাদানের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গণ টিকাদানের জন্য কাজ করছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোধে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সচেতনতামূলক কাজ চলছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ যদি বেড়ে যায় তাহলে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত মানুষের জীবন ও জীবিকা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে, প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও তা করবে। তিনি বলেন, বৈঠকে পবিত্র রমজান মাসের প্রাক্কালে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর, আদা, পেঁয়াজ, মসুর ডাল ও ছোলার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা হয়। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠকে জানিয়েছে যে, আসন্ন চাহিদার বিপরীতে দেশে এ সব পণ্যেও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। অতএব এ সব পণ্যেও অভাব হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০২১, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইন ২০২১, পাবলিক ডেবট অ্যাক্ট ২০২১, এবং পেমেন্ট এন্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০২১ এই চারটি বিলের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।