১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ঘটমান সংবাদ এ স্বাগতম।  সাথেই থাকুন।
হোমখেলাক্রিকেটমিরাজের সেঞ্চুরিতে ২য় দিনশেষে ৩৫৫ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ

মিরাজের সেঞ্চুরিতে ২য় দিনশেষে ৩৫৫ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ

মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৩৫৫ রানে এগিয়ে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

মিরাজের সেঞ্চুরিতে ভর করে প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪৩০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ।

জবাবে নিজেদের ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ২৯ ওভারে ২ উইকেটে ৭৫ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের পতন হওয়া ২টি উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।

টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে ১০৩ রানে আউট হন মিরাজ। এছাড়া সাকিব আল হাসান ৬৮, ওপেনার সাদমান ইসলাম ৫৯ ও মুশফিকুর রহিম-লিটন দাস ৩৮ রান করে করেন।

প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২৪২ রান। সাকিব ৩৯ ও লিটন দাস ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।

আজ দিনের ১৪তম বলে বিদায় নেন লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফল বাঁ-হাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানের ঘুর্ণি সামলাতে না পেরে বোল্ড হন লিটন। ৬৭ বলে ৬টি চারে ৩৮ রান করে ওয়ারিকানের চতুর্থ শিকার হন লিটন।

গতকাল ১৯৩ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর সাকিবের সাথে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে স্বস্তিতে দিন শেষ করতে বড় ভূমিকা রাখেন লিটন। দ্বিতীয় দিন সাকিবের সাথে জুটি বড় করতে পারেননি তিনি। শেষমেষ ১০৯ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়েছেন তারা। বাংলাদেশের ইনিংসে এটি ছিলো তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির জুটি।

পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিকুর রহিমের ১০৮ বলে ৫৯ রান ছিলো ইনিংসের সেরা জুটি। এই জুটিকে ছাপিয়ে গেছেন সাকিব ও মিরাজ। সপ্তম উইকেটে ১৩০ বলে ৬৭ রান যোগ করেন তারা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে ১১০তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৩শ স্পর্শ করেন সাকিব-মিরাজ। তার আগে ওয়ারিকানের করা ৯৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞার পর টেস্টে ফিরেই হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি।

তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘদেহী স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের বলে বিদায় নেন সাকিব। হাল্কা লাফিয়ে ওঠা বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব। ২৩১ মিনিট ক্রিজে থেকে ৫টি চারে ১৫০ বলে নিজের নান্দনিক ইনিংসটি সাজান সাকিব। নিজের ২৫তম ওভারে এসে প্রথম উইকেট পেলেন কর্নওয়াল।

এরপর মিরাজের সাথে জুটি বেঁধে মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকেন তাইজুল ইসলাম। ৯৩ বলে ৭টি চারে ৪৬ রানে অপরাজিত থেকে বিরতিতে যান মিরাজ। ২১ বলে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তাইজুল।

বিরতি থেকে ফিরেই টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ। তার হাফ-সেঞ্চুরি পর ব্যক্তিগত ১৮ রানে বিদায় নেন তাইজুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শ্যানন গাব্রিয়েলের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন তিনি।

তাইজুল-মিরাজ জুটি ১১৭ বলে ৪৪ রান স্কোর বোর্ডে জমা করেন।

তাইজুলের আউটের পর দশ নম্বর ব্যাটসম্যান নাইম হাসানকে নিয়ে দলের স্কোর বাড়াতে থাকেন মিরাজ। ব্যক্তিগত ৭১ রানে জীবনও পান মিরাজ। স্টাম্পিংএর হাত থেকে বাঁচেন তিনি। অন্যপ্রান্তে বেশ সাবলীল ব্যাট করতে থাকেন নাইম। ১৪০তম ওভারে ওয়ানিকানকে তিনটি চার মারেন নাইম। আর ১৪৩ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর চারশতে পৌঁছায়। ২২তমবারের মত নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ইনিংসে চারশত রান করতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ।

মিরাজ নার্ভাস-নাইন্টিতে পা দেয়ার পর আউট হন নাইম। ৪৬ বলে ৪টি চারে ২৪ রান করে এনক্রুমার বোনারের শিকার হন তিনি। তখন ৯২ রানে দাঁড়িয়ে মিরাজ। দলের স্কোর ৯ উইকেটে ৪১৬। এতে মিরাজের সেঞ্চুরি নিয়ে শংকা জাগে। কারন বাংলাদেশের হাতে শেষ উইকেট। মিরাজের প্রয়োজন ছিলো ৮ রান।

শেষ পর্যন্ত ১৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়ারিকানের ডেলিভারিতে প্যাডেল সুইপে ২ রান তুলে ১৬০তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৩তম ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ।

আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করা চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেন মিরাজ। এর আগে ২০০৪ সালে খালেদ মাসুদ, ২০১০ সালে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ২০১৩ সালে সোহাগ গাজী আট নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন।

সেঞ্চুরির পর বেশি দূর নিজের ইনিংসকে টানতে পারেননি মিরাজ। দলীয় ৪৩০ রান শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে কর্নওয়ালের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ২২৪ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৬৮ বল খেলে ১৩টি চার মারেন মিরাজ। ১১ বলে ৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুস্তাফিজুর রহমান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ারিকান ১৩৩ রানে ৪টি উইকেট নেন। এছাড়া কর্নওয়াল ২টি, রোচ-গ্যাব্রিয়েল-বোনার ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

মিরাজের আউটের বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হবার পরই চা-বিরতির ডাক দেন আম্পায়াররা। চা-বিরতির পর নিজেদের ইনিংস শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

প্রথম ৪ ওভার ভালোভাবেই কাটিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল। পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট শিকারের স্বাদ দেন একাদশের একমাত্র পেসার মুস্তাফিজ।

ক্যাম্পবেলকে(৩) লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজ। প্রথম উইকেট পতনের পর সর্তক হয়ে পড়েন ব্র্যাথওয়েট ও তিন নম্বরে নামা শায়নে মোসলে। তবে এই জুটিকে উইকেটে থিতু হতে দেননি মুস্তাফিজ। ২ রান মোসলেকে লেগ বিফোর আউট করেন ফিজ। ফলে দলীয় ২৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এরপর অবশ্য বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ব্র্যাথওয়েট ও বোনার। তৃতীয় উইকেটে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন শেষ করেন তারা। ব্র্যাথওয়েট ৪৯ ও বোনার ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ১৮ রানে ২ উইকেট নেন। বল হাতে হাত উইকেট শুন্য ছিলেন দলের চার স্পিনার সাকিব-মিরাজ-তাইজুল ও নাইম।


স্কোর কার্ড :

বাংলাদেশ ইনিংস :
সাদমান ইসলাম এলবিডব্লু ব ওয়ারিকান ৫৯
তামিম ইকবাল বোল্ড ব রোচ ৯
নাজমুল হোসেন শান্ত রান আউট (রোচ/সিলভা/মায়ারস) ২৫
মোমিনুল হক ক ক্যাম্পবেল ব ওয়ারিকান ২৬
মুশফিকুর রহিম ক কর্নওয়াল ব ওয়ারিকাান ৩৮
সাকিব আল হাসান ক ব্রার্থওয়েট ব কর্নওয়াল ৬৮
লিটন দাস বোল্ড ব ওয়ারিকান ৩৮
মেহেদি হাসান মিরাজ ক অতি (হজ) ব কর্নওয়াল ১০৩
তাইজুল ইসলাম ক ডা সিলভা ব গ্যাব্রিয়েল ১৮
নাইম হাসান বোল্ড ব বোনার ২৪
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ৩
অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৭, নো-৫, ও-৫) ১৯
মোট (অলআউট, ১৫০.২ ওভার) ৪৩০
উইকেট পতন : ১/২৩ (তামিম), ২/৬৬ (শান্ত), ৩/১১৯ (মোমিনুল), ৪/১৩৪ (সাদমান), ৫/১৯৩ (মুশফিকুর), ৬/২৪৮ (লিটন), ৭/৩১৫ (সাকিব), ৮/৩৫৯ (তাইজুল), ৯/৪১৬ (নাইম), ১০/৪৩০ (মিরাজ) ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
কেমার রোচ : ২০-৫-৬০-১ (নো-১),
ক্যানন গাব্রিয়েল : ২৬-৪-৬৯-১ (ও-১),
রাকিম কর্নওয়াল : ৪২.২-৫-১১৪-২,
কাইল মায়ারস : ৭-২-১৬-০,
জোমেল ওয়ারিকান : ৪৮-৮-১৩৩-৪ (নো-৩),
ক্রেইগ ব্রার্থওয়েট : ৪-০-১৩-০,
এনক্রুমার বোনার : ৩-০-১৬-১ (নো-১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট অপরাজিত ৪৯
জন ক্যাম্পবেল এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজুর ৩
শায়নে মোসলে এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজুর ২
এনক্রুমার বোনার অপরাজিত ১৭
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-৩) ৪
মোট (২ উইকেট, ২৯ ওভার) ৭৫
উইকেট পতন : ১/১১ (ক্যাম্পবেল), ২/২৪ (মোসলে)।

বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজ : ৮-২-১৮-২ (নো-১),
সাকিব : ৬-১-১৬-০,
মিরাজ : ৭-২-২৪-০ (নো-১),
তাইজুল : ৫-২-৯-০ (নো-১),
নাইম : ৩-০-৭-০।

বাসস

Print Friendly, PDF & Email

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বশেষ খবর

Recent Comments