বাড়তি ওজন কমাতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন উপায় অনুসরণ করছেন। কেউ কেউ অন্য কোন অস্বাভাবিক উপায়ে ওজন কমাতে চেষ্টা করছেন।
দেশে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। ৭০ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, ফ্যাটিলিভার ডিসিজ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার এই রোগগুলোকে একত্রে বলা হয় অসংক্রামক রোগ বা লাইফস্টাইল ডিজিস। এই রোগগুলোর পিছনে মূল কারণ হচ্ছে ভুল জীবন যাপন পদ্ধতি।
এই রোগগুলোর পিছনে যত কারণ আছে তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে স্থূলতা যা একাধিক রোগের জন্ম দেয়। এই স্থূল মানুষের সংখা সারা বিশ্বে দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৪ সালের এক গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ মানুষ স্থূল। বর্তমানে এই হার হচ্ছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। এটাকে প্যান্ডেমিক বলা যায়।
লাইফস্টাইল এক্সপার্টদের মতে, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, ফ্যাটিলিভার ডিজিস, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার এই রোগগুলোকে প্রতিরোধ করতে হলে বাড়তি ওজন কমাতে হবে।
বাড়তি ওজন কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে রাতের খাবার গ্রহণে সতর্কতা। টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাতের খাবারের সময় নিয়ে একটা তালিকা করা হয়েছে। সে তালিকা অনুযায়ী চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, ব্রাজিলের মানুষরা রাতের খাবার খায় ৭টা থেকে ৮টা এবং ৮.৩০টা এর মধ্যে। ফলে এই দেশগুলোতে স্থূল মানুষের সংখা কম এবং তাদের ফিগার স্লিম।
অপরদিকে পৃথিবীর স্বর্গ আমেরিকার বহু মানুষ রাতের খাবার খায় ১০টা, ১১টা এবং ১২টায়। এতে আমেরিকাতে স্থূল মানুষের সংখা বাড়ছে। আমেরিকাতে প্রতি তিন জনের মধ্যে দুই জন স্থূল।
বাংলাদেশের মানুষ রাতের খাবার খায় ৯টা, ১০টা এবং ১১টায়। এতে বাংলাদেশেও স্থূল মানুষের সংখা বাড়ছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ চাকরিজীবী অথবা ব্যবসায়ী। তারা দুপুরের খাবার খায় বাইরে এবং বাসায় এসে রাতের খাবার খায় অনেক দেরিতে। অনেকে আবার রাতে বেশি খাবার খায় এবং খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমের মধ্যে এই বাড়তি খাবার ক্যালরিতে পরিণত হয়। ঘুমিয়ে থাকার কারণে শরীর এই বাড়তি ক্যালরি শোষণ করতে পারে না। ফলে এটি শক্তিতে রুপান্তরিত হয় এবং এই শক্তি ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। এই ফ্যাট শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমা হয় এবং ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
লাইফস্টাইল এক্সপার্টদের মতে, উচ্চতা, ওজন এবং লাইফস্টাইল বিবেচনায় পুরুষদের প্রতিদিন গড় ক্যালরি দরকার ২৫০০ কিলো-ক্যালরি এবং মহিলাদের দরকার ২২০০ কিলো-ক্যালরি। অতএব কোন পুরুষ যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২৫০০ কিলো-ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন এবং তা খরচ করে ফেলেন তবে তার ওজন বাড়বেও না কমবেও না। অনুরূপ মহিলাদের ক্ষেত্রেও। পুরুষ অথবা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে যদি এর বেশি কিলো-ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন তবে এই অতিরিক্ত ক্যালরি ওজন বাড়াবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাবার খেতে হবে সকালে রাজার মতো, দুপুরে রাজপুত্রের মতো এবং রাতে ভিখারির মতো।
ডায়েট বিশেষজ্ঞ পল রোয়েনের মতে, রাতে বেশি খেলে ওজন বাড়বেই। রাতে ভূরিভোজ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হঠাৎ মৃত্যুর জন্য এক আদর্শ ব্যবস্থা।
পল রোয়েনের পরামর্শ, ওজন ঠিক রাখার জন্য সকালে ভরপেট নাশতা করা। দুপুরে তৃপ্তির সাথে খাওয়া এবং রাতে হালকা খাবার খাওয়া।
আরও পড়ুন : মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে খাদ্যতালিকায় রাখবেন যে সবজি