গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এই ২১ দিনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৮১ জন । এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে সরকার ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে একটি স্মরণ সভা করতে যাচ্ছে।
সচিবালয়ে অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়াদি সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির দ্বিতীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান স্মরণ সভা আয়োজন করতে কিছু ব্যয় সম্পৃক্ত থাকবে। ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে এসব প্রয়োজনীয় ক্রয় সম্পন্ন হবে।
বৈঠকে এ লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
তিনি জানান, রাজধানীর বিআইসিসিতে অনুষ্ঠেয় ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এ অনুষ্ঠান আযোজনে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
সালেহউদ্দিন বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা স্মরণসভার প্রস্তুতির বিষয়টি দেখছেন।
এতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শহিদ পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের সংখা প্রকাশ করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৬৩১ জন ছাত্র-জনতা নিহত এবং ১৯ ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে এবং গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এই ২১ দিনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৮১ জন ।
গত ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের সংখা প্রকাশ করার জন্য পরিপূর্ণ একটি তালিকা তৈরি করতে। কমিটি বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
আহতদের মধ্যে ১৬ হাজার জনের বেশি সারা দেশে সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত তিন হাজার জন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ও কমিটির প্রধান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা চ্যালেঞ্জিং। কারণ সরকারি হাসপাতালের মতো কঠোরভাবে ডেটা সংরক্ষণ করে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো । কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা ভয়ে হাসপাতালে নাম রেজিস্ট্রি করতে চায় না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি খসড়া তালিকা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এর ডেটা আরও আপডেট করছেন। কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে এই তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে এবং সেখানে আরও বেশ কিছু অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের বেসরকারি ক্লিনিকে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের বিষয়ে সরকারকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন। প্রায় ১১ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে আহতের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, দুই হাজার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের সংখা বেশি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। প্রাণহানিও ঘটেছে সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে । এ বিভাগে নিহত হয়েছেন ৪৭৭ জন। বরিশালে নিহত হয়েছেন একজন।
চট্টগ্রামে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন এবং খুলনায় নিহত হয়েছেন ৩৯ জন।
যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিন হাজার ৪৮ জনের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। তাদের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫৩৫ জন স্থায়ীভাবে শারীরিক অক্ষম হয়ে পরেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: পুনরায় ভাত গরমে কিছু সাবধানতা