ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর দন্ডায়মান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম স্তম্ভটি হলো- যাকাত। ইসলামে সালাতের পরেই যাকাত ফরজ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের অধিকাংশ জায়গায় আল্লাহ তাআলা যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব যাকাতের বিধান ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে, যা আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য অপরিহার্য।
প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষকে প্রতি বছর নিজের আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করার নিয়মকে যাকাত বলা হয়।
নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হয়। তবে সব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্ত হলো- এসব সম্পদ নিসাব পরিমাণ হতে হবে।
নারীদের সোনা-রুপার অলঙ্কারের উপর জাকাত দেওয়া ফরজ। যদি অলঙ্কার একেবারেই ব্যবহার না করা হয় তারপড়েও সব ক্ষেত্রে জাকাত দিতে হবে। অলঙ্কার ছাড়াও সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর উপরও জাকাত ফরজ। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)
প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার জাকাত আদায় করতে হবে। টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে জাকাত ফরজ হয়। ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদিতে রাখা নগদ টাকা এসবের ওপরও জাকাত ফরজ।
ব্যবসা করার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক, যেমন জমিজমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি, যেমন মুদিসামগ্রী, কাপড়চোপড়, অলঙ্কার, নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, হার্ডওয়্যার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদির মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে।
হজের উদ্দেশে কিংবা ঘরবাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়েশাদি ইত্যাদির জন্য যদি অর্থ সঞ্চয় করে রাখা হয়, তবে তাতেও জাকাত দিতে হবে।
দোকানপাটে যা কিছু বিক্রির উদ্দেশে রাখা হয়, তা বাণিজ্যিক পণ্য। এর মূল্যও নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত আদায় করতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ)
মাসয়ালা: মুসলমান নারী-পুরুষের মালের ওপর কিছু শর্তসাপেক্ষে জাকাত ফরজ করা হয়েছে। ইসলামে যেসব শর্তসাপেক্ষে মালের ওপর যাকাত ফরজ হয় তা হলো-
১. মালের উপর পূর্ণ একটি বছর তার পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকতে হবে।
২. মাল এমন প্রকৃতির হতে হবে যার ওপর জাকাত ধার্য হতে পারে।
৩. মাল নিসাব পরিমাণ বা নিসাবের মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে।
৪. ঐ নিসাব পরিমাণ মাল তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে।
মাসয়ালা: বছরের মাঝামাঝি সময়ে সম্পদ নিসাব থেকে কমে এলেও বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পরিপূর্ণ থাকলে জাকাত ওয়াজিব হবে এবং বছর শেষে যত টাকা হাতে থাকে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৮৮)
মাসয়ালা: জমি থেকে উৎপাদিত ফসলাদির ওপর সাধারণত উশর আসে, জাকাত আসে না। তাই উৎপাদিত ফসল বছর শেষে অতিরিক্ত হলেও জাকাত দিতে হবে না। তবে সেগুলো বিক্রির টাকার সঙ্গে অন্যান্য জাকাতের সম্পদ থাকলে তার সঙ্গে মিলিয়ে নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দেওয়া জরুরি।
মাসয়ালা: নিজের ও পরিবারের খরচ বাদ দিয়ে দোকানের মাল ও ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে বছর শেষে জাকাত আদায় করা জরুরি হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ২/২০)
আরও পড়ুন: পবিত্র আখেরী চাহার সোম্বা পালিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর