বিশ্বরেকর্ড গড়তে সিলেট থেকে ২৮১ কিলোমিটার সাঁতার শুরু করেছেন ৭০ বছর বয়সী একুশে পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৬ টায় সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী সুরমা নদীর কিনব্রিজ পয়েন্ট সংলগ্ন চাঁদনিঘাট থেকে সাঁতার শুরু করেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
এসময় সিলেটের বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। ২৮১ কিলোমিটার সাঁতরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফেরিঘাটে পৌঁছার লক্ষমাত্রা নিয়ে তাঁর এই যাত্রা। এতে প্রায় ৭০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে তার ধারণা।
সোমবার সন্ধ্যা ৬ টায় ছাতক থেকে প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার দূরে তিনি অবস্থান করছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁর যাত্রা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাঁতার যাত্রায় সঙ্গে থাকা নৌবাহিনীর এসআই আনোয়ার।
তিনি বলেন, সকাল ছয়টায় সিলেটের কিনব্রিজসংলগ্ন সুরমা নদীর চাঁদনীঘাট থেকে সাঁতার শুরু করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।
বর্তমানে তিনি ছাতক পাড় হয়ে প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। সাঁতারের এই উদ্যোগে সহায়তা করছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড।
এ ছাড়া সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নৌ পুলিশ ও সিলেট সিভিল সার্জনের একটি দল। জরুরি সেবা দলটি নৌকায় সার্বক্ষণিক ক্ষিতীন্দ্রের সঙ্গে থাকবে।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র সাঁতারে নামার আগেই তাঁর শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ক্ষিতীন্দ্র যতক্ষণ পানিতে অবস্থান করবেন, ততক্ষণ আমাদের চিকিৎসক দল তাঁর সঙ্গে থাকবে। নৌকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার, নেবুলাইজার, জরুরি ওষুধপথ্যসহ চিকিৎসক দল অবস্থান করছে।
সিলেট জেলা নৌ পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির আহমদ জানান, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নৌ-পুলিশসহ সিভিল সার্জনের একাধিক টিম তাঁর সঙ্গে আছে।
পানিতে অবস্থানকালীন সময়ে তার যাতে শারীরিক বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না হয়, বা হলেও যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করবে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক সভাপতি সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ২৮১ কিলোমিটারের মধ্যে সুরমা নদীর ১৪৪ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার, ধনু নদের ৮৪ দশমিক ৩১ কিলোমিটার, ঘোড়াউত্রা নদীর ৩৪ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ও মেঘনা নদীর ১৮ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার পাড়ি দেবেন ক্ষিতীন্দ্র।
সাঁতার চলাকালে তিনি পানিতে খাওয়া-দাওয়াসহ যাবতীয় কাজ করবেন। সফলভাবে সাঁতার সম্পন্ন করলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হবে।
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র সাঁতার কেটে এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে চারটি পুরস্কার পেয়েছেন।
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বলেন, আমার এবারের লক্ষ্য বিশ্বরেকর্ড গড়তে ২৮৫ কি.মি সাঁতার কাটা। যদি এতে সফল হই তাহলে বয়স্ক সাঁতারু হিসাবে এটা একটা বিশ্বরেকর্ড হবে।
ক্ষিতীন্দ্র ১৯৫২ সালের ২৩ মে নেত্রকোণার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিলেটের এমসি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ দলকে প্রশংসায় ভাসালেন নাভিদ নেওয়াজ