২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ঘটমান সংবাদ এ স্বাগতম।  সাথেই থাকুন।
হোমসাহিত্যপ্রবন্ধ/নিবন্ধসংস্কৃতির শিকড় : নুরুজ্জামান মাহদি

সংস্কৃতির শিকড় : নুরুজ্জামান মাহদি

সংস্কৃতির শিকড় : নুরুজ্জামান মাহদি

সংস্কৃতির শিকড় নিয়ে ভাবতে গেলে বলতে হয় একটি সমাজে মানুষের প্রচলিত কর্মকাণ্ডই সেখানকার সংস্কৃতি।

মানুষ তার নির্দিষ্ট সামাজিক গণ্ডিতে বছরের পর বছর যে সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসে তাই ঐ সমাজের সংস্কৃতি।

যেমন আমাদের পাড়ায় ঈদের অনুষ্ঠান হতো, পাশের পাড়ায় দুর্গাপূজা। আবার গিধাঊষা, সরিষাহাটী, সহনাটী আখড়ালপাড়া, ভূঁইয়ার বাজার ইত্যাদি জায়গায় অষ্টমী, বান্নী হতো; যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে ছিলো একেকটা উৎসব। সেখান থেকে খই, মুড়ি, মুড়কি, খেলনা, গৃহস্থালি বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হতো উৎসবের আমেজে। কেউ কখনো সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আমরা স্কুল ছুটির পর দলবেঁধে হুল্লোড় করতে করতে দৌঁড়ে চলে যেতাম সেই অষ্টমী বা বান্নীতে। আগেই সে উপলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করে রাখতাম। আমাদের অভিভাবকগণ অনেকদিন আগে থেকেই এসব উৎসবে খরচের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় টাকার সংস্থান করে রাখতেন।

এলাকায় খেইর, কুস্তি, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, যাত্রাপালা ইত্যাদি চলতো সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে।

বিভিন্ন বিলে মাছ ধরার উৎসব ছিলো ‘পলো বাওয়া'। একটি পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট রাতে একটি নির্দিষ্ট বিলে এই মাছ ধরার উৎসব হতো। কখনো কালামধর বিলে, বাউশালি বিলে, আবার ডালিয়া বিলে বা বুরুঙ্গা বিলে মাছ ধরার জন্য নির্দিষ্ট তারিখের অপেক্ষায় থাকতো সৌখিন মৎস্য শিকারীরা। রাত্রে দলবেঁধে যাওয়ার সময় তারা তাদের বিশেষ ধরনের শব্দ করতো, যাতে বোঝা যেতো পলো বাওয়ার জন্য লোকজন যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসব বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরতে আসতো।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এসবই আসলে আমাদের সংস্কৃতি। কেউ কখনো এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আসলে কারও মনে এ বিষয়ে প্রশ্নই ওঠেনি।

কেউ কখনো বলেনি, আমরা মুসলমান আমরা ধর্মীয়ভাবে যা করি সেটাই বাঙালি সংস্কৃতি অথবা আমরা হিন্দু আমরা ধর্মীয়ভাবে যা করি তা-ই বাঙালি সংস্কৃতি। আসলে তখন মানুষ মানুষের সাথে সহাবস্থানের চিন্তা করতো, কার কোন ধর্ম তা নিয়ে ভাবতো না।

অথচ এখন মানুষের মনে কতো দ্বিধা! কতো অল্পতেই তারা ধর্মহীন হয়ে যায়! যার যার ধর্ম সে সে পালন করলেই তো হয়। আর যার যার কর্ম সে সে করলেই হয়ে যায়। কারোরটা নিয়ে অন্য কারো চিন্তা করে সময় ও সমাজ নষ্ট না করলেই হয়। একজনের দায়িত্ব আরেকজনের নেয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা, প্রত্যেকেই তার কর্মফল ভোগ করবে।

[নুরুজ্জামান মাহদি, কবি, প্রাবন্ধিক (Contact: nuruzzaman_001@yahoo.com)]

নুরুজ্জামান মাহদি'র আরও লেখা:

বাবা দিবস : একজন সন্তানের অনুভূতি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বশেষ খবর

Recent Comments