৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঘটমান সংবাদ এ স্বাগতম।  সাথেই থাকুন।
হোমদেশঢাকাডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাহিদা কম, বিপাকে খামারিরা

ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাহিদা কম, বিপাকে খামারিরা

সারাদেশে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিমের চাহিদা কম। ফলে পোলট্রির রাজধানী খ্যাত গাজীপুর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডিমের সরবরাহ কমেছে। এতে জেলার পোলট্রি খামারিরা বিপাকে পড়েছেন ।

খামারিদের ভাষ্য, তারা নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় ডিম সরবরাহ করতেন। পোলট্রি খাদ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত কয়েকদিন ধরে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তবে দু-তিন ধরে ঐ সব এলাকা থেকে ডিম কিনতে না আসায় প্রতি ১০০ ডিমে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমে এসেছে। এতে খামারিরা আবার লোকসানের মুখে পড়ছেন।

এদিকে, গাজীপুরের পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে এখনো ৫৫-৬০ টাকায় প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার গাজীপুর মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় ফ্রেশ ডিমের আড়তের মালিক নূরে আলম  বলেন, সোমবার ১০০ ডিম ১ হাজার ৩০ টাকা করে কিনেছি। এরসঙ্গে ভাড়া ও লেবার খরচও রয়েছে। আমার আড়তে ১৫ হাজার ডিম রয়েছে। গত দুদিনে প্রতি ১০০ ডিমে ৫০-৭০ টাকা কমার কারণে আগে কেনা ডিমগুলো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে। তাই নতুন করে আর আড়তে ডিম আনছি না। কয়েকদিন বাজার পর্যবেক্ষণ করে দোকানে মাল উঠাবো।

কালিগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের বৌন্না এলাকার পোলট্রি খামারি মঞ্জুর ব্যাপারী বলেন, পোলট্রি খাদ্যের ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় কিনতে হয়, যা আগে কেনা হতো ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। কয়েকদিন ডিমের দাম বাড়তি থাকায় কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও ফের দাম কমার কথা শুনে আমরা হতাশ হয়েছি। লোকসান দিয়ে পোলট্রি খামার চালানো যাবে না।

একই ইউনিয়নের ছাতিয়ানী এলাকার রেদওয়ান পোলট্রি ফার্মের মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, পোলট্রি খামার টিকিয়ে রাখার জন্য খামারিকে প্রতিটি ডিম  ১২-১৩ টাকায় বিক্রি করতে হবে। তা না হলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না এবং খামারিরা পোলট্রি শিল্প বিমুখী হবেন।

তিনি বলেন, গত সোমবার ১০০ টি লাল ডিম বিক্রি করেছি ১ হাজার ৩৫ টাকায় এবং ১০০ টি সাদা ডিম বিক্রি করেছি ৯৮০ টাকায়। এতে প্রতিটি ডিমের দাম দাঁড়ায় ১০ টাকারও কম।

ওষুধ ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার এবং ঋণের চাপে গাজীপুর সদর উপজেলা, টঙ্গী, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলার অনেক পোলট্রি খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলায় পোলট্রি খামার বলতে কিছুই থাকবে না বলে জানান খামারিরা।

গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রতি বছর ডিমের চাহিদা থাকে ৯১ কোটি পিস। প্রতিদিন গড়ে ডিম উৎপাদন হচ্ছে ৩১ লাখ ৬ হাজার ৬৬৬ পিস। জেলায় খামার রয়েছে মোট ৬ হাজার ৬৭১টি। এর মধ্যে লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৪ হাজার ১০৬টি এবং ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে২ হাজার ৫৬৫টি। ডিম উৎপাদনের জন্য লেয়ার খামারে মুরগির সংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ। যেখান থেকে বছরে ১১৪ কোটি পিস ডিম পাওয়া যায়। জেলার চাহিদা মিটিয়েও ডিম রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়।

গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম উকিল উদ্দিন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য আরেকটি কারণ হচ্ছে ভুট্টা আমদানি কমে যাওয়া। এর ফলে দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এছাড়া সয়াবিনের (সয়াবিনের খইল) দাম বেড়ে গেছে । যে কারণে এসবের প্রভাব ডিমের বাজারে পড়েছে।  যার ফলে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। তবে  ডিমের দাম শীগ্রই কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ পোলট্রি রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব খ ম মহসিন বলেন, পোলট্রি খাদ্যের দাম স্বাভাবিক হলে ডিম ও মুরগির মাংসের দামও কমতে থাকবে। যদিও খাবারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পোলট্রি খামারিরা দিশেহারা।

আরও পড়ুন: গুরুত্বপূর্ণ ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক রচনা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বশেষ খবর

Recent Comments