আহিনা খাতুন ২০১৮ সালে ঢাকায় আসেন এবং আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। চাকরির সুবাদে আলী নুরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের সম্পর্ক এবং বিয়ে বহির্ভূত তিন বছর সংসার করেন তারা। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করেন আহিনা খাতুন। আসামিকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
আলী নূর বিশ্বাস ও আহিনা খাতুন বিয়ে না করেই তিন বছর স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সম্প্রতি আলী নূরের গ্রামের বাড়িতে বিয়ের কথা শুনে ক্রোধে তাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আহিনা খাতুন।
সাভারের আশুলিয়ায় হত্যা মামলার মূল আসামি আহিনা খাতুনকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। সেই সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খাঁন।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী আলী নূর বিশ্বাস মাগুড়া জেলার শ্রীপুর থানার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে গার্মেন্টসের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে কিছুদিন হলো অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। আসামি আহিনা খাতুনের বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় তিন বছর আগে ভিকটিমের সঙ্গে তার পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে গভীর সখ্য গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা দুজনই একসঙ্গে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন এবং বিয়ে বহির্ভূত তিন বছর সংসার করেন তারা।
এমতাবস্থায় বিবাহ ছাড়াই তারা নিজ নিজ পরিবারকে না জানিয়েই স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় বিভিন্ন বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। এই তিন বছরে তারা পাঁচ বার বাসা পরিবর্তন করেছেন।
আরও জানা গেছে, জুলাই মাসের শুরুতে আলী নূর বিশ্বাস কিছু দিনের জন্য মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার গ্রামের বাড়িতে যান। আহিনা খাতুন জানতে পারেন আলী নূর বিশ্বাস গ্রামের বাড়িতে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। পরে আলী নূর ঢাকায় ফিরে আসেন। আলী নূরের বিয়ের কথা জানতে পেরে আহিনার মনে ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার সৃষ্টি হয়।
তিনি আলী নূরকে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের মধ্যকার মান-অভিমান চলতে থাকলেও কৌশলে ২৯ জুলাই আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে শুরু করেন। ৩০ জুলাই রাতের খাবার শেষে উভয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। আহিনা খাতুন সেদিন ভোররাতে আলী নূরকে ঘুমন্ত অবস্থায় বটি দিয়ে মাথা, গলা এবং বুকে নৃশংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন।
আসামির বক্তব্যের সূত্র ধরে র্যাব আরও জানায়, রক্তাক্ত মরদেহ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে কাঁথা চাপা দিয়ে রাখেন আহিনা খাতুন। হত্যার পরে তার থালা-বাসন, কাপড় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি একটি বস্তায় ভরে ভোরেই ঘর তালা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় আসেন তিনি।
সেখানে আহিনা জনৈক মজিবুরের সহযোগিতায় একটি টিনশেড বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন এবং আত্মগোপনে চলে যান। আহিনা বিবেকের তাড়নায় ৩১ জুলাই বিকেলের দিকে আলী নূরের মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিমের ভগ্নিপতি জাকিরকে জানান যে, আলী নূর অসুস্থ, তাকে বাঁচাতে তার পরিবার যেন দ্রুত আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড ভাড়া বাসায় যান।
০১ আগস্ট দুপুরে সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন জিরাবোর সেই টিনশেড বাসায় গিয়ে দেখতে পান যে রুমের দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। তারা বাসার মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জানালা খুললে রুমের ভেতর হতে তীব্র দুর্গন্ধসহ মেঝেতে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় চিৎ হয়ে ভিকটিম আলী নূরের মরদেহ দেখতে পান।
পুলিশকে জানালে আশুলিয়া থানা পুলিশ ঘরের তালা ভেঙে রুমের ভেতর থেকে মরদেহ বের করে। পরবর্তীতে সুরতহাল ও ময়না তদন্ত শেষে ২ আগস্ট ভুক্তভোগীর বড় ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পরই র্যাব-৪ আসামি গ্রেফতারে ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আহিনা খাতুনকে গ্রেফতার করে র্যাব সদস্যরা।
আরও পড়ুন: রাবিতে প্রক্সিতে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীর ফল বাতিল