অ্যান্টিগার পর সেন্ট লুসিয়াতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে সফরকারী বাংলাদেশ। হারের সেঞ্চুরিতে হোয়াইটওয়াশ হল বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসে ১৩৪তম ম্যাচে এটি শততম হার টাইগারদের। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত টাইগাররা মোট টেস্ট খেলেছেন ১৩৪টি। এর মধ্যে ১৬টিতে জয় পেয়েছে এবং ১৮টিতে ড্র করেছে । আর বাকি ১০০টিতে হেরেছে।
টেস্টের ইতিহাসে মাত্র ১৩৪ ম্যাচ খেলেই ১০০ হারের দুর্নাম নেই আর কোনো দলের। এর আগে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০ হারের রেকর্ড ছিল নিউজিল্যান্ডের। তাদের শততম হার আসে ২৪১ টেস্টে। আর ৩৩টিতে পেয়েছিল জয়। তৃতীয় স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার শততম হার আসে ২৬৬ ম্যাচে। একই সময় তাদের জয় ছিল ৮৪ ম্যাচে।
শততম হার দেখতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ৩৭৪তম টেস্টে অজিরা পেয়েছিল শততম হারের স্বাদ। এছাড়া ১০০টি টেস্ট হারতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৬৮, পাকিস্তানের ৩৫৭, ইংল্যান্ডের ৩৪১, ভারতের ৩০৩ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ২৭৯ ম্যাচ লেগেছিল।
ড্যারেন স্যামি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেই হার দেখছিলো টাইগাররা। ১৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৩২ রান করেছিলো টাইগাররা। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৪২ রানে পিছিয়ে ছিলো বাংলাদেশ।
চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই বৃষ্টির দাপট ছিলো সেন্ট লুসিয়ায়। প্রথম সেশন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় সেশনের অনেক সময় চলে যায় বৃষ্টির দখলে। অবশেষে পাঁচ ঘন্টার পর স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় মাঠের লড়াই শুরু হয়। এতে চতুর্থ দিন বাকী আড়াই ঘন্টায় ৩৮ ওভার খেলা বাকী থাকে।
এ অবস্থায় ব্যাট হাতে লড়াই শুরু করেন বাংলাদেশের নুরুল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। নুরুল ১৬ ও মিরাজ শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন।
নুরুল ও মিরাজের ১টি করে চারে দিনের প্রথম ১৯ বলে ১৬ রান পায় বাংলাদেশ। ৪০তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মারলেও, আলজারি জোসেফের পরের ডেলিভারিতে হার মানেন মিরাজ। জোসেফের বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২০ বলে ৪ রান করা মিরাজ। নুরুলের সাথে ৩০ রানের জুটিতে মাত্র ৪ রানই অবদান ছিলো তার।
১৪৮ রানে সপ্তম উইকেট পতনের পর মারমুখী হয়ে উঠেন নুরুল। কারন ইনিংস হারের পথটা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন তিনি। এমন অবস্থায় ৪১তম ওভারে কেমার রোচকে প্রথমে ওভার বাউন্ডারি ও পরে বাউন্ডারি মারেন নুরুল। ম্যাচে বাংলাদেশ পক্ষে প্রথম ছক্কা আসে নুরুলের কাছ থেকে। পরের ওভারে আবারও দু’টি বাউন্ডারি আসে নুুরুলের ব্যাট থেকে। এবার বোলার ছিলেন জোসেফ।
নন-স্ট্রাইকে থেকে নুরুলের মারমুখী ব্যাটিং দেখতে থাকা, এবাদত ৪৩তম ওভারে বিদায় নেন। সিলেসের পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন এবাদত। সামান্য পেছনে দৌঁড়ে ঝাপ দিয়ে দারুন ক্যাচ দেন রেইমন রেইফার। ৭ বল খেলে খালি হাতে ফিরেন এবাদত।
ঐ ওভারের তৃতীয় বল থেকে অতিরিক্ত হিসেবে ৫ রান পেলে, ইনিংস হার এড়ায় বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ বলে বাংলাদেশের দশম ব্যাটার শরিফুল ইসলামকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন সিলেস। রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি শরিফুল। খালি হাতে ফিরেন শরিফুলও।
জোসেফের করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মেরে ৭ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন নুরুল। ৪০ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারে তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি নুরুলের। আর তৃতীয় বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন নুরুল।
আর ৪৫তম ওভারের শেষ বলে রান নিতে গিয়ে রান আউট হন শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদ। ফলে ৪৫ ওভারে ১৮৬ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। খেলা শুরুর পর মাত্র ৫০ মিনিটে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের এই ইনিংস। এতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১৩ রানের টার্গেট দিতে পারে বাংলাদেশ।
৫০ বল খেলে ৮৪ মিনিট ক্রিজে থেকে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন নুরুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোচ-জোসেফ-সিলেস ৩টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মায়ার্স। এই টেস্টে ১৪৬ রান ও ২ উইকেট নেন তিনি। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে ১৫৩ রান ও বল হাতে ৬ উইকেট নিয়েছেন মায়ার্স।
আগামী ২ জুলাই থেকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আরও পড়ুন: একনেকে ২,২১৬ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন