ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি' কালজয়ী গানটি রচনার জন্য বিখ্যাত। বাংলা সার্ভিসের শ্রোতাদের জরিপে গানটি তৃতীয় সেরা বাংলা গান হিসেবে বিবেচিত হয়।
তিনি ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ চৌধুরী মাতা জহুরা খাতুন। তিনি ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন। জনপ্রিয় এই সাংবাদিক ও কলামিস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
১৯৫০ সালেই গাফফার চৌধুরীর কর্মজীবন পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছিল। তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি আর থেমে থাকেননি। একের পর এক বিভিন্ন প্ত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি কলকাতার ‘দৈনিক আনন্দবাজার' ও ‘যুগান্তর' পত্রিকার কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে লেখা কলাম অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। বাংলাদেশে তিনি আওয়ামী লীগ পন্থী কলামিস্ট হিসাবে পরিচিত এবং সমালোচিত ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ প্রচারক হিসাবে তিনি রাজনৈতিক বিষয়াবলি ব্যাখ্যা করেছেন।
১৯৭৪ সালে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এরপর তার প্রবাস জীবনের ইতিহাস শুরু হয় এবং ২২ বছর বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেননি। প্রবাসে বসেও তিনি বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোতে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিয়মিত লিখে গেছেন।
তিনি প্রায়ই তার জন্মভূমিতে আসতেন এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতে নিয়মিত কলাম লিখতেন। আর এভাবেই তিনি তার প্রিয় বাংলাদেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে গেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ঘটনার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ বজায় রাখতেন।
ব্রিটেনে যাওয়ার আগে ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জয় বাংলা, যুগান্তর ও আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেন।
যুক্তরাজ্যে ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী ‘নতুন দিন' নামে একটি সংবাদপত্র চালু করেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা জীবনে ‘ডানপিটে শওকত’, ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘নাম না জানা ভোরে’, ‘নীল যমুনা’, ‘শেষ রজনীর চাঁদ ’ কৃষ্ণপক্ষ', ‘সম্রাটের ছবি', ‘ ডানপিটে শওকত' ও ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ এর মতো ৩৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নামের একটি গ্রন্থ রচনা করেন; যা থেকে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেও বাংলা সাহিত্যের ভুবনে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), স্বাধীনতা পদক (২০০৯), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৩), একুশে পদক (১৯৮৩), বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, যুক্তরাজ্যের ফ্রিডম অব বারা উপাধিসহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ : কত নম্বর পেলে কোন গ্রেড?