করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকেই খুলেছে কক্সবাজার সৈকত সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলো। প্রথম দিনে স্বল্প সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি ঘটেছে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সৈকতে।
সৈকতে একটি বেসরকারী সংস্থা নিয়োগকৃত উদ্ধার কর্মী মো. হোছন বলেন- প্রথম দিনে পাঁচ শতাধিক পর্যটক সৈকতে উপস্থিত হয়েছে। বিশাল এই সৈকতে স্বল্প সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি তেমন একটা ভিড় হয়নি।
পর্যটকরা নুন্যতম দুরুত্ব রেখেই বিচরণ করেছে। একই ভাবে সমুদ্রে নেমে গোসলও করেছেন অনেকে। ঢাকার উত্তরা থেকে পর্যটন নগরীতে এসেছেন আহসানুল হক। সাথে রয়েছেন দুই শিশুকন্যাসহ তার স্ত্রী।
হোটেলে উঠে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে তারা নেমে পড়েছেন সৈকতের পানিতে। আহসান বলেন- ‘বাসায় থেকে হাঁফিয়ে উঠেছি। তাই পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত শুনে প্রথম দিনে কক্সবাজার চলে এসেছি।’ তিনি বলেন- ‘প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যের ছোঁয়া পেয়ে আমাদের শিশু দু’টি আতœহারা। কখনও বালু নিয়ে গায়ে মাখছে। কখনও সাগরের দিকে দৌঁড় দিচ্ছে। প্রকৃতির এমন স্পর্শ পেলে শরীর মন চাঙ্গা উঠে।’
ঢাকার মিরপুর থেকে এসেছেন পর্যটক দম্পতি সৌরভ ও নুসরাত। এই দম্পতি জানালেন- দীর্ঘ দিন বাসায় থাকতে হয়েছে। প্রথম সুযোগেই কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন এই দম্পতি। নুসরাত বলেন- ‘পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিয়ে সরকার ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃতির ছোঁয়ায় এসে মানুষ প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হবে, আমরাও হয়েছি। দীর্ঘদিন পর মন ভরে মুক্ত বাতাস নিতে পারছি।’
পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার ফলে কক্সবাজার সৈকত ফিরে পেয়েছে তার আপন সৌন্দর্য। খুলেছে সৈকত তীরের দোকান পাট। কাজে যোগ দিয়েছেন সৈকতে উদ্ধার কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। শুরু হয়েছে হকারদের উচ্ছ্বল হাঁক ডাক। সৈকতে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন আমির হোছন। জানালেন- দীর্ঘ ৫ মাস ঘরে বসে কর্মহীন দিন গেছে। অনেক ধার দেনা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র আবার চালু হয়েছে এতে আমরা অত্যন্ত খুশি।
এদিকে কক্সবাজার সৈকত, হিমছড়ি ও ইনানী সৈকত, টেকনাফের পর্যটন কেন্দ্রগুলো, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক খুলে দেয়া হলেও সেন্টমার্টিনের সাথে জাহাজ চলাচল বন্ধ। ফলে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য আপতত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে যাতায়াত করতে হবে। কোথাও ভিড় করা যাবে না। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত- ৫০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া দিতে পারবে হোটেল-মোটেল মালিকরা।
কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘অধিকাংশ হোটেলে অগ্রিম বুকিং শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন- আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছি। পর্যটকরাও যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে আমরা সচেতন করছি।
কক্সবাজারে তারকা মানের হোটেল সীগাল’র প্রধান নির্বাহী ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী রুমী বলেন- দেড় বছর ধরে অব্যাহত লোকসান দিয়েছে কক্সবাজারের হোটেল মোটেলগুলো। দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়া হলেও হোটেল মালিকরা এখনও আতংকে। তিনি বলেন- আবার যদি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ হয়, দেশের পর্যটন শিল্প স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন- জীবন জীবিকার প্রয়োজনে এবং পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পুনরায় পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’ তিনি বলেন- স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা তদারক করতে প্রশাসন থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।
কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে থাকছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। রিসোর্ট, হোটেল মোটেল ও বিনোদন পার্কগুলোর মালিকদের পরিষ্কার বলে দিয়েছি, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য হবে প্রশাসন। যারা মানবে না প্রয়োজনে তাদের প্রতিষ্টান বন্ধ করে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন :
- টি২০ বিশ্বকাপ ২০২১ এর ফিক্সচার
- নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর ২০২১ : বাংলাদেশ দল ঘোষণা
- করোনার বিস্তার রোধে পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্দেশনা