সোমবার মায়ানমারের সামরিক টেলিভিশন জানায়, সামরিক বাহিনী এক বছরের জন্য সেই দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রিপোর্টে জানা যায় অং সান সু চি সহ দেশের অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদকে আটক করা হয়েছে।
সামরিক মালিকানাধীন মায়াওয়াদি টিভিতে পড়া একটি ঘোষণায় সামরিক বাহিনী খসড়া সংবিধানের একটি অংশকে উদ্ধৃত করে যা জাতীয় জরুরি অবস্থার সময়ে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয়। গত নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটার জালিয়াতির বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতা এবং করোনভাইরাস সংকটের কারণে নির্বাচন স্থগিত করতে না পারায় প্রতিবাদ হিসেবে সামরিক বাহিনীর এই ক্ষমতা দখল।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর সামরিক অভ্যুত্থানের হুমকির মুখে সকালে দেশটির নতুন সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল।
১৯৬২ সালে শুরু হওয়া পাঁচ দশক সামরিক শাসন ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার পর মিয়ানমার সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মিয়ানমারের আংশিক অথচ তাত্পর্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক অগ্রগতির উল্টো পথে হাঁটা নির্দেশ করে সামরিক বাহিনীর এই ক্ষমতা দখল। গণতান্ত্রিক সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী সু চির জন্যও এটি ক্ষমতা থেকে অবিশ্বাস্য পতন; যিনি দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা এবং তার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কার জিতেন।
সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি তাদের ফেসবুক পেজে বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে জানায়, সেনাবাহিনীর পদক্ষেপগুলি ন্যায়বিচারহীন এবং সংবিধান এবং ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেছে। বিবৃতিতে সোমবারের “অভ্যুত্থান” এবং যে কোনও “সামরিক একনায়কত্বে” ফিরে আসার বিরোধিতা করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই বিবৃতি কে দিয়েছে তা জানা যায়নি, কেননা এনএলডি'র কেউই তাদের কল ধরছেন না।
সেনাবাহিনীর পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন এক বিবৃতিতে এই আটকের বিষয়ে “গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা” প্রকাশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘ (ইউএন) মহাসচিব এর কার্যালয়ও এই ঘটনাকে “গণতান্ত্রিক সংস্কারের মারাত্মক আঘাত” বলে তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে।
প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজ সার্ভিস ইরাওয়াদ্দি জানায়, স্টেট এডভাইজার সু চি এবং দেশের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে ভোরের প্রথমদিকে আটক করা হয়। এটি এনএলডির মুখপাত্র মায়ো নিন্টকে উদ্ধৃত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, আইন প্রণেতা এবং আঞ্চলিক মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।
সামরিক টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমান্ডার-ইন-চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং দেশের দায়িত্বে থাকবেন, এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সুই প্রেসিডেন্টের পদে উন্নীত হবেন। মিন্ট সুই একজন প্রাক্তন জেনারেল যিনি ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপর বর্বরতার বিরুদ্ধে অভিযানের নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রাক্তন জান্তা নেতা থান শোয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
পরবর্তী ঘোষণায় সামরিক বাহিনী বলে, এক বছরের মধ্যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সামরিক বাহিনী বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।