ভারতের উত্তর প্রদেশে একজন হিন্দু নারীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার অভিযোগে একজন মুসলিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দেশটিতে একজন মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করে কোনও হিন্দু মেয়ের ইসলাম গ্রহণকে নিষিদ্ধ করে নতুন আইন হয়েছে, তার অধীনে এটিই প্রথম কোনও গ্রেফতারের ঘটনা। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এ ধরনের বিয়েকে ‘লাভ জিহাদ’ নামে আখ্যায়িত করে থাকে।
বুধবার উত্তর প্রদেশের বারিলি জেলার পুলিশ গ্রেফতারের বিষয়টি টুইটারে পোস্ট দিয়ে নিশ্চিত করেছে।
যে নারীকে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছিল, তার বাবা বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, তিনি পুলিশে অভিযোগ করেছেন। কেননা, ওই ব্যক্তি তার মেয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল এবং হুমকি দিচ্ছিল।
মুসলমান ব্যক্তিটির সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বছরের শুরুতে তিনি অন্য একজন পুরুষকে বিয়ে করেন।
পুলিশ বিবিসিকে বলেছে, এক বছর আগে ওই নারীর পরিবার ওই মুসলমান ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে। কিন্তু পরে ওই নারী ফেরত এসে যখন বলেন যে, তাকে অপহরণ করা হয়নি, তখন মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বুধবার গ্রেফতারের পর ওই ব্যক্তিকে ১৪ দিনের জুডিশিয়াল কাস্টডিতে পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ এবং ‘ওই নারীর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।'
হিন্দু-মুসলিম বিয়ে বন্ধে গত ২৪ নভেম্বর একটি নতুন আইন পাস করে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। এতে অভিযুক্তদের ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান করা হয়। এছাড়া এ ধরনের মামলাকে জামিন অযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সমালোচকেরা আইনটিকে মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে উত্তর প্রদেশ ছাড়াও আরও চারটি রাজ্য এ ধরনের আইনের খসড়া চূড়ান্ত করছে।
লাভ জিহাদ বিরোধী আইনটি কী
‘বলপূর্বক' বা ‘জালিয়াতি' করে ধর্মান্তরিত করা বন্ধ করার জন্য ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তর প্রদেশ নভেম্বরে এই আইন পাস করে। অর্ডিন্যান্সটিতে বলা হয়েছে, এই ধরনের ধর্মান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই বিয়ে বাতিল বলে বিবেচিত হবে।
যারা সেই ধর্মান্তর করাবেন, সেই দোষী ব্যক্তিদের আর্থিক জরিমানা ও সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
অর্ডিন্যান্সটিকে সাধারণভাবে ‘লাভ-জিহাদ বিরোধী' আইন বলেই বর্ণনা করা হচ্ছে – যদিও লাভ জিহাদ শব্দ-বন্ধটি অর্ডিন্যান্সের খসড়াতে কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।
ভারতে মুসলিম যুবকরা যখন কোনও হিন্দু মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করতে যান, সেটাকে বিজেপি ও দেশের বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী অনেকদিন ধরেই ‘লাভ জিহাদ' বলে বর্ণনা করে আসছে।
এই মূহুর্তে মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা, কর্ণাটক এবং আসামও কথিত ‘লাভ জিহাদ' ঠেকানোর এই আইন পাসের পরিকল্পনা করছে।
এই সব কটি ক্ষমতায় রয়েছে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। দলটির বিরুদ্ধে মুসলিমবিরোধী সেন্টিমেন্ট স্বাভাবিকীকরণের অভিযোগ রয়েছে। সমালোচকেরা মনে করেন আইনটি প্রতিক্রিয়াশীল এবং আপত্তিকর। সূত্র: বিবিসি।